Quadcopter কথন
শুরুটা কবে হয় ঠিক মনে নাই। ২-১ এর ফর্ম ফিলআপের আগে পারে হতে পারে। টিম তৈরি, টাকা কালেকশন, টুকটাক থেকে শুরু করে বড় বড় ঘাটাঘাটি অনেক কিছুই করতে হয়েছিল। কারণ Quadcopter এর জ্ঞানের হাড়িতে Ashik বাদ দিয়ে আমাদের অবস্থা তখন 'ভাড়ে মা ভবানী'র মতই।
সময় গ্যাপ দিয়ে, রোজার মধ্যে পাটুয়াটুলি থেকে জিনিসপত্র কিনে এক ছুটির দিনে বসলাম। ৩ দিনের মানসিক খাটাখাটুনি আর মডারেট পরিশ্রম করে ওড়ানোর মত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হইছিল। আশিকের টানা ১৪-১৫ ঘন্টা কাজ করার ability দেখে আমি যার পর নাই অবাক। এত ক্যামনে পারে একজন মানুষ?
প্রথম যেদিন টেস্ট রান করলাম শেখ রাসেলের মাঠে। একপাশে ছেলে-পেলে ক্রিকেট খেলতেছে। Quad দেখে ঘিরে ধরছে একদম। কিন্তু আফসোস উড়াউড়ি কিছু নাই। ৪-৫ টা ডিগবাজী খাইলো। ২ টা প্রপ ভাংলো। আসলে হওয়ার মধ্যে শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান হইছিল। বাস্তবিক হয় নাই। ৪ টা মোটারের ৩ টা ঘুরে ক্লক। ১ টা এন্টি ক্লক! ডিগবাজী না খাইয়া কই যায়! 😂 মাঝখান দিয়ে এতগুলা লোকের সামনে বেইজ্জতি
আরও ১ রাত বসে বসে গুতাইলাম। আকাম কুকাম করলাম। পরদিন ভোর বেলা আমি আর আশিক জুবেরীর মাঠে। প্রথবারের মত Quad টা আকাশে উঠল। জুবেরী মাঠে গেটের কাছে যে ইউক্যালিপটাস গাছ আছে তার ২/৩ ভাগ উচ্চতার কাছাকাছি। মনে হচ্ছিল খুশিতে লাফাই। কিন্তু খুশি স্থায়ী হয়নাই বেশীক্ষণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২ পাশ থেকে ২ টা প্রপ উড়তে উড়তে কই যেন চলে গেল। কি করব বুঝতেও পারছিনা। মনে হইল আশিক চিৎকার করতেছে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় ওর ভাষা তখন আমার কাছে দূর্বোধ্য।
একটু পরেই দেখি Quad নীচে পড়ে আছে। ল্যান্ডিং এর এক ঠ্যাং ভাঙ্গা! একটা মোটরের বুলেট উড়ে গেছে। তাও সেদিন বিকালে দীপ্ত আমি মিলে সাইকেল সারার দোকান থেকে বুলেটের সাবস্টিটিউট খুজে আনছিলাম। এখন ঘটনা মনে পড়লে ভাবি ঠ্যালর নাম বাপজান। কিন্তু আরও শকিং ব্যাপার ছিল একটা মোটর নষ্ট হয়ে গেছিলো একদম। শকিং বললাম কারণ আর যাই হোক মোটর নষ্ট হইতে দেখিনাই।
কাজে বিরতি পড়ল। একদিন দুইদিন হয়। ১/২/৩ জন করে বসি। আর বসা হয়না। মাঝখান দিয়ে পুরা গরমে কারেন্ট গেলে Brushless Motor দিয়ে প্রপ ঘুরায়া বাতাস খাইছি 😎। ফ্যানের পাখা ৩০০০ RPM, ব্রাশলেসে ৩০০০০ না হইয়া যাবেনা আশা করি 😂।
অতঃপর ডিপার্টমেন্টর মহার্ঘ্য আন্দোলন। যার প্রভাবে পরীক্ষা কবে হবে কোন ঠিক নাই। আশংকায় আছি এই জীবনে থার্ড ইয়ারে উঠতে পারব কিনা। কিন্তু বসে থাকলে তো চলবেনা। গ্যাটের পয়সা খরচ করে মোটর আনাইলাম। ফোন করে ডেকে ডেকে বসাইলাম। এবার হওয়া চাই ই চাই! কিন্তু তাও এক অজানা সমস্যা। প্রতি বারই কোন না কোন এক মোটর ঘুরেনা। যত যাই করি ঘুরেনা। আরডুইনো দিয়ে কানেকশন দিলে আবার ঠিকই কাজ করে। বড়ই ভুতুরে 🙄। যার সমাধান আমরা কেউ জানি না।
হঠাৎ কি মনে হইল Quad এর নারি টিপে পরীক্ষা করতে যেয়ে একটা জিনিস ধরা পড়ল। কি জিনিস তা বলব না। (বললে মানসন্মান থাকবেনা 🤭)। ঠিকঠাক করে দিতেই সুন্দর performance. ল্যান্ডিং লেগ নিয়ে সমস্যা ছিল। চেয়ারম্যান স্যার কে অনুরোধ করলাম আইসিই ডিপার্টমেন্ট থেকে যেন থ্রিডি প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারি। কিন্তু সমস্যা সাধলো লেন্থ নিয়ে। এত বড় আকারে প্রিন্ট করানো পসিবল না। বাট আইসিইর স্যারেরা বড়ই হেল্পফুল 😍
কি আর করার! অগত্যা ছুটলাম রাজশাহীর ধোলাইখালে 😍
ও হ্যা! বলে রাখি বুয়েটের পোলাপানদের জন্য যদি ধোলাইখাল থেকে থাকে তাইলে রাবি-রুয়েটের পোলাপানদের জন্য আছে ভদ্রা মোড় ওরফে রাজশাহীর ধোলাইখাল।
এলুমিনিয়ামের ল্যান্ডিং লেগ বানানোর পর কোন এক অজানা কারনে মনে হইতেছে কার্বন ফাইবার তুমি আমার বা* 😂
আজকে এগুলা করার পর নিয়ে আসলাম সাবাশ বাংলার মাঠে। শেখ রাসেল, জুবেরীর মাঠ যখন অপয়া হইল, তখন সাবাশ বাংলার মাঠই সই! উড়াইলাম। ২য় বারের মত। ৪ সেকেন্ডের মাথায় ডিগবাজী। আরও একটা প্রপের সলিল সমাধি। হোসন থেকে প্রপ আনায়া বাসায় বসে সেট করলাম। নতুন করে প্রোগ্রাম দিলাম।
রাত ৮ টা বেজে গেছে ততক্ষণে। দীপ্ত বার বার মানা করতে ছিল যাওয়ার দরকার নাই। এখন উড়ানো লাগবেনা। কিন্তু আমার মাথায় জেদ চেপে বসছে। আজকে মানে আজকেই। আজকেই উড়াব। জুবেরীর মাঠে উড়াবো।
১ বার না, ২ বার না, ৩ বার ও না। দীপ্ত আর আমি মিলে গুনে গুনে ৪ বার উড়াইলাম। কিন্তু আফসোস একবারও ঠিকঠাক ল্যান্ডিং করাইতে পারি নাই। থ্রোটল না দিলেও গ্রাভিটিকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে উপরে উঠে যায়। Team Gravity Destroyer এর সার্থক নামকরণ বলা চলে 😅।
যাই হোক শেষ বার যে উচ্চতা থেকে নীচে পড়ল সেখান থেকে মানুষ পড়লে না মরলেও কোমায় চলে যাওয়া অস্বাভাবিক না। আর এটা তো Quad. ভাঙ্গার মধ্যে আবার দুইটা প্রপ। ল্যান্ডিং লেগ একটা একটু বেকে গেছে। বাকি সব কিছুই অক্ষত। 😁
মানেটা এমন হয়ে দাড়াইছে, একবার উড়াইতে গেলে প্রপের গুদাম কিনে নিয়ে উড়াইতে বসা লাগবে। 😂 উড়ানোতে এখনও অনেক সমস্যা আছে। কাচা হাত পাকা করা লাগবে। দুনিয়াদারি বড়ই কঠিন, তার চেয়েও কঠিন Quadcopter কন্ট্রোল করা।
যাই হোক অনেক লিখে ফেললাম, দুঃখ আর খুশির ঠ্যালায়। সমসময় যদি সাকসেক পোস্টে টাইমলাইন ভরিয়ে রাখি তাহলে মন মানবেনা। এমন কিছু কন্সট্রাক্টিভ ফেইলিউর পোস্ট ও থাক, প্রজেক্টের কন্টকময়তা বুঝাইতে। ☺
No comments